ভুট্টা চাষে সারের পরিমান ও ভুট্টা চাষের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে জানুন

সাধারণত আমরা জানি ভুট্টা একটি সম্ভাবনাময় ফসল। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ভুট্টার বেশ কয়েকটি জাত উদ্ভাবন করেছেন। এসব উন্নত জাতের ফসলের ফলন বেশি হয়। তাই ভুট্টা চাষে সারের পরিমান ও ভুট্টা চাষের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে সম্পন্ন আর্টিকেলটি পড়ুন। তাহলে আশা করি ভুট্টা চাষ সম্পর্কে আপনার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
ভুট্টা চাষের উপযুক্ত সময় - ভুট্টা চাষে সারের পরিমান
ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল। ভুট্টা খুবই অল্প খরচে চাষ করা যায় এবং এটি চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। হাইব্রিড ভুট্টা চাষ করলে ফলন বেশি পাওয়া যায় এবং লাভও বেশি হয়। ভুট্টা সাধারণত বারোমাসি চাষ করা যায়। ভুট্টা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে সম্পন্ন আর্টিকেল পড়ুন।

ভূমিকা

সাধারণত আমরা জানি ভুট্টা একটি সম্ভাবনাময় ফসল। আমরা জানি ভুট্টা একটি উচ্চ ফলনশীল দানা জাতীয় ফসল। ধান এবং গমের পর স্থান রয়েছে ভুট্টার। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষের জন্য কৃষকেরা অনেক লাভমান হচ্ছে। এই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে আপনার ভুট্টা চাষ পদ্ধতি বিষয়ক সকল সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন। তাই ভুট্টা চাষ সম্পর্কে সকল সমস্যার সমাধান পেতে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

ভুট্টা কোথায় ভালো জন্মে

সাধারণত ভুট্টা চাষের জন্য মাটিতে পিএইচ এর মাত্রা ৫.৫ থেকে ৮.৫ পর্যন্ত যদি হয় তাহলে অবশ্যই সেখানে ভুট্টা চাষ করা যায় এবং সেই মাটিতে ভুট্টার ফলন ভালো হয়। আপনারা ভুট্টা চাষের জন্য এমন একটি জমি বাছাই করবেন যেই জমিতে একদমই পানি জমে না থাকে। কারণ পানি জমে থাকলে সেই জমিতে ভুট্টা চাষ ভালো হয় না। তাই আপনার অবশ্যই এমন একটি জমি বাছাই করবেন যেই জমিতে বৃষ্টির পানিতে পানি না জমে যায়।

তাহলে সেখানে ভুট্টার চাষ এবং ফলন ভালো পাবেন। সাধারণত দোয়াশ এবং বেলে দোয়াশ মাটিতে ভুট্টা ভালো পরিমাণে চাষ করা যায়।দোয়াশ এবং বেলে দোয়াশ মাটি খুবই উপযোগী ভুট্টা চাষে। তাই ভুট্টা চাষ করলে দোয়াশ এবং বেলে দোয়াশ মাটিতে চাষ করুন। এই মাটিগুলোতে ভুট্টার ফলন ভালো হয়।

এক বিঘা জমিতে কত মন ভুট্টা হয়

ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল। অতি স্বল্প খরচে এই ভুট্টা চাষ করা যায়। যদি আপনারা সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে ভুট্টা চাষ করেন তাহলে এক বিঘা জমিতে আপনারা প্রায় ৫০ থেকে ৬০ মন ভুট্টার ফলন পাবেন। আর এই ভুট্টা চাষ করতে খুবই অল্প খরচ হয় এবং লাভ বেশি পাওয়া যায়। 

তাহলে আমরা জানতে পারলাম আমরা যদি ভুট্টা চাষ করি তাহলে প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ মন ভুট্টার ফলন পাওয়া যাবে।অর্থাৎ ৩৩ শতাংশে আপনারা ফলন পাবেন ৫০ থেকে ৬০ মন। অর্থাৎ এক শতাংশে ভুট্টার ফলন পাবেন প্রায় ৬০ কেজি যার অর্থ দেড় মন ফলন আপনারা পাবেন।

ভুট্টা চাষের উপযুক্ত সময় -  হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি 

ভুট্টা একটি উচ্চ ফলনশীল ফসল। আর এই ভুট্টা চাষের প্রধান এবং উপযুক্ত  সময় হচ্ছে অক্টোবর এবং নভেম্বর অর্থাৎ রবি মৌসুম। সাধারণত আমরা জানি অক্টোবর এবং নভেম্বর রবি মৌসুম। এই সময় ভুট্টা চাষ করার উপযুক্ত সময়। এই সময় ভুট্টা চাষ করলে ভুট্টার ফলন ভালো হয়। এবং সঠিক মত পরিচর্যা করলে অল্প খরচে বেশি পরিমাণ ভুট্টার ফলন পাওয়া যায় এবং খুব দ্রুত লাভবান হয়ে যায়।

ভুট্টা চাষের আর একটি উপযুক্ত সময় হচ্ছে ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ। অর্থাৎ খরিপ মৌসুম, সাধারণত ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসের সময়টিকে আমরা খরিপ মৌসুম বলে থাকি। তাহলে পরিশেষে বলা যায় ভুট্টা চাষের প্রধান এবং উপযুক্ত  সময় হচ্ছে অক্টোবর এবং নভেম্বর মাস থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাস পর্যন্ত এই ভুট্টার চাষ করা যায়।

ভুট্টা বীজ বপন পদ্ধতি

সাধারণত আমরা যদি বারি জাতের ভুট্টা চাষ করতে চাই তাহলে আমাদের করণীয় হচ্ছে প্রতি হেক্টর প্রতি বীজ বপন করতে হবে ২৫ থেকে ৩০ কেজি। তাহলে ভুট্টার ফলন এবং মান ভালো থাকবে। ঠিক তেমনি অপরদিকে আমরা যদি খইয়ের জন্য ভুট্টা চাষ করতে চাই তাহলে প্রতি হেক্টর প্রতি ১৫ থেকে ২০ কেজি বীজ শারি আকারে খুব সাবধানতার সাথে বপন করতে হবে। তাহলে আশা করি আমরা ঠিকমতো পরিচর্যা করলে ভালো ফসল পাব।বীজ বপন করার জন্য শারি তৈরি করতে হবে।
 
আর এই শারির দূরত্ব একটা থেকে অন্যটার মধ্যে ৭৫ সেমি দূরত্ব রাখতে হবে এবং ৫০ সেমি দূরত্বে দুইটি করে গাছ রাখতে হবে। অর্থাৎ ২৫ সেমি দূরত্বে একটি করে গাছ রাখতে হবে রাখতে হবে। যদি এই নিয়মগুলো মেনে আপনি সঠিকভাবে বীজ বপন করেন তাহলে অবশ্যই আপনি ভাল ফসল পাবেন। এবং এই ফসলের থেকে আপনি লাভবান হবেন। তাই ভুট্টার বীজ ভবনে এই পদ্ধতিগুলা অবলম্বন করুন।

সাইলেজের জন্য ভুট্টা চাষ সঠিক পদ্ধতি

সাধারণত সাইলেজ তৈরি করা যায় ভুট্টার সবুজ গাছগুলো কেটে তারপর সেগুলো কুচি কুচি করে কেটে সেগুলা গাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাখা হয়। আর বাতাস না লাগলে ভুট্টার সেই সবুজ গাছগুলো পচে যায় না। এর প্রধান কারণ হলো অনুজীব গুলি বিচালি থেকে শর্করাগুলো হজম করে নেয় এবং তার থেকে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি করে যা প্রাকৃতিক প্রিজারভেটিভ হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাইলেজের মূল প্রক্রিয়া হল সঠিকভাবে গাজন প্রক্রিয়া তৈরি করা।

এখন আমরা জানবো সাইলেজ এর জন্য ভুট্টা চাষ এর বিভিন্ন পদ্ধতি কিভাবে করতে হয়। প্রথমে আপনি খেয়াল রাখবেন যখন গোবর সার জমিতে প্রয়োগ করবেন তখন যেন গোবর কাঁচা অবস্থায় না থাকে। কারণ কাঁচা অবস্থায় গোবর থাকলে ভুট্টার গাছের বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হতে পারে। তাই আপনারা জমি চাষের কিছুদিন আগে পুরো জমি জুড়ে গোবর ছড়িয়ে রাখবেন। গোবর শুকিয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর জমিতে দুইটি চাষ দিবেন।

তাহলে জমির সাথে গোবর সারটি সম্পূর্ণভাবে ছড়িয়ে যাবে এবং মাটিতে অনেক পুষ্টি ছড়িয়ে যাবে। দুইটি চার্জ দেওয়ার পর জমিটাকে কিছুদিন রেখে দিবে জমির মাটিটা শুকানোর জন্য। তবে এখানে একটি কথা মনে রাখবেন সব জমি কিন্তু শুকানোর প্রয়োজন হয় না। কিছু কিছু এলাকায় রয়েছে যে এলাকাগুলোর মাটি এমনি শুকনো থাকে। মনে রাখবেন একটা কথা যে অতিরিক্ত শুকনো মাটিতে বীজ তেমন একটা ভালো জন্মায় না।

ঠিক তেমনি অতিরিক্ত ভেজা জমিতে বীজগুলা জন্মালেও গাছের বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। তাই এই বিষয় দুইটি খেয়াল রাখবেন। আপনারা অনেকেই জানেন না জমিতে এক ধরনের পোকা হয়। এই পোকা গুলো গাছের অঙ্কুর বেরোনোর পর গাছের গোড়াটি কেটে দেয়। এই পোকা দমন করার জন্য আপনাকে ভালো পরিমান কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

বীজ বপন করার আগে জমিদের রাসায়নিক সার হিসেবে ডিএপি ৪০ কেজি, জিংক 3 কেজি এবং বোরন দুই কেজি ব্যবহার করবে। আর হ্যাঁ অবশ্যই এই সার তিনটে একসাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করবেন। এবং এরপর জমিতে আবার দুইটি চাষ দিয়ে নিবেন। এই উপরোক্ত নিয়মগুলো যদি মেনে ভুট্টা চাষ করেন তাহলে আপনি খুব ভালো ফলন পাবেন।

ভুট্টা চাষে সারের পরিমান

  • ইউরিয়াঃ এক হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের জন্য আপনাকে ইউরিয়া সার দিতে হবে ১৭২ থেকে ৩১২ কেজি সর্বোচ্চ সার আপনি দিতে পারেন। আমরা জানি এক হেক্টর সমান সমান ৭.৪১ বিঘা। তাহলে ৭.৪১ বিঘাতে আপনাকে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে ১৭২ থেকে সর্বোচ্চ ৩১২ কেজি
  • টিএসপি ঃ এক হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের জন্য আপনাকে টিএসপি সারের পরিমাণ দিতে হবে ১৬৮  কেজি থেকে ২১৬ কেজি সর্বোচ্চ। তাহলে ভুট্টা চাষ খুব সুন্দর এবং সফলভাবে হবে।
  • এমওপিঃ এক হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের জন্য আপনাকে এমওপি স্যারের পরিমাণ দিতে হবে ৯৬ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ১৪৪ কেজি পর্যন্ত। তাহলে পরিমাণটা ঠিক থাকবে এবং ভুট্টার ফলন ভালো হবে।
  • জিপসামঃ এক হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের জন্য আপনাকে জিপসাম সারের পরিমাণ দিতে হবে ১৪৪ কেজি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৬৮ কেজি পর্যন্ত। এই চারটি স্যার যদি নিয়ম মোতাবেক আপনি জমিতে প্রয়োগ করেন তাহলে অবশ্যই ফলন ভালো হবে।

উন্নত জাতের ভুট্টার নাম

  • সিনজেনটা NH7720
  • বারি হাইব্রিড  ১১
  • বারি হাইব্রিড  ১২
  • বারি হাইব্রিড  ১৩
  • বারি হাইব্রিড  ১৪
  • বারি হাইব্রিড  ১৫
  • বারি হাইব্রিড  ১৬
  • বারি হাইব্রিড  ১৭
  • বিডাব্লিউ এমআরআই  হাইব্রিড বেবি কর্ণ  ১
  • বিডাব্লিউ এমআরআই  হাইব্রিড ২

ভুট্টার মাঠ ফসল বলা হয় কেন

ভুট্টা চাষের আগে আমাদের জানতে হবে ভোটটাকে কেন মাঠ ফসল বলা হয়।আমরা সকলেই জানি যে যেসব ফসল বিভিন্ন চাষ এবং পরিচর্যার মাধ্যমে একটি মাঠে নির্দিষ্ট সময় ধরে চাষ করা হয় তাকে মাঠ ফসল বলা হয়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে মাঠ পর্যায়ে প্রচুর পরিমাণে চাষাবাদ করা ফসল কে মাঠ ফসল বলা হয়। এবং এই ফসল থেকে একজন কৃষকের জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে। ভুট্টা একটি উচ্চফলনশীল ফসল। প্রচুর পরিমাণে ভুট্টা চাষ হয় বলে ভুট্টা কে মাঠ ফসল বলা হয়।

শেষ কথা

ভুট্টা একটি উচ্চ ফলনশীল ফসল। সারাবছর এই ভুট্টা চাষ করা যায়। যদি অল্প খরচে লাভবান হতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়ম মেনে ভুট্টা চাষ করুন। যদি আমার এই পোস্টটি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন এবং নিত্য প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url