ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে আমাদের উপকারে আসে জানুন

ন্যানো টেকনোলজি নামটি শুনলেই আমাদের মনে কৌতুহলে সৃষ্টি হয়। আপনি যদি ন্যানো টেকনোলজি কি সেটা না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ আজকের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটিতে আমরা ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে আমাদের উপকারে আসে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
ন্যানো টেকনোলজি
আপনি যদি আজকের এই আরটিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকেন তাহলে আপনি ন্যানো টেকনোলজি জনক কে, ন্যানো টেকনোলজি কোথায় কোথায় প্রয়োগ করা হয়, ন্যানো টেকনোলজির ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন এখন বেশি দেরি না করে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।

ন্যানো টেকনোলজি কি

ন্যানো অর্থ হলো ছোট বা ক্ষুদ্র। এই ন্যানো শব্দটি একটি গ্রিক শব্দ থেকে এসেছে। ন্যানো এর গ্রিক শব্দটি হলো nanos। যার আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায় dwarft। এই ন্যানো শব্দটি এখন মাপের একক হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে। আর এই ন্যানোমিটার স্কেলে যে সমস্ত টেকনোলজি গুলি সর্ম্পকিত সেগুলিকেই বলে ন্যানো টেকনোলজি বা ন্যানোপ্রযুক্তি।

এখন বর্তমানে আমরা সকলেই সব জিনিস মাপামাপি করি এই একক মিটারে। যেমন বাড়িঘর, আসবাবপত্র, উচ্চতা ইত্যাদি। আমরা পূর্বে জানতে পারলাম ন্যানো অর্থ হল ক্ষুদ্র। তাই বলা যায় এক ন্যানোমিটার সমান ১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগ।

তাই ন্যানো টেকনোলজি কে এইভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় যে, অত্যন্ত সুনিপুণভাবে দক্ষতার সাথে পারমাণবিক ও আণবিক স্কেলে অতি ক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব বস্তুকে কাজে লাগানোর যে টেকনোলজি তাকেই ন্যানো টেকনোলজি বলে।

ন্যানো টেকনোলজি জনক কে

ন্যানো টেকনোলজির জনক কে এটি কত তারিখে সর্বপ্রথম আলোচনায় আসে অথবা কত সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয় সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা। তাই চলুন এখন আমরা সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
আরো পড়ুনঃ 
রিচার্ড ফাইনম্যানকে ন্যানো প্রযুক্তির জনক বলা হয়। তিনি ছিলেন একজন পদার্থবিদ। তিনিই সর্বপ্রথম ২৯ ডিসেম্বর ১৯৫৯ সালে এক আলোচনা সভায় ন্যানো টেকনোলজি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা প্রদান করেন। এই ন্যানোপ্রযুক্তি অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

এই ন্যানো টেকনোলজি বা ন্যানো প্রযুক্তির ব্যাবহার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। যেমন ইলেকট্রনিক্স, চিকিৎসাবিজ্ঞান এমনকি শক্তি উৎপাদনেও এর বোইপ্লবিক ধারণা নিয়ে আসতে পারে। যা আমরা ইতিমধ্যেই অনেকটাই দেখতে পাচ্ছি।

আবার অপরদিকে এটির প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর ও বিরুপ প্রভাব নিয়ে ও আসতে পারে বলে ও অনেক সংশয় রয়েছে। একটু বাধার কারণেও প্রায় এখন অনেক দেশে এই ন্যানো টেকনোলজি বা ন্যানো প্রযুক্তি নিয়ে অনেক গবেষণা চলমান রয়েছে। কিভাবে এটির উন্নতর ব্যাবহার নিশ্চিত করা যায়।

ন্যানো টেকনোলজি কোথায় কোথায় প্রয়োগ করা হয়

ন্যানো টেকনোলজি বা ন্যানো প্রযুক্তির অনেক জল্পনা কল্পনা থাকা সত্বেও এটি বর্তমানে এখন বিভিন্ন জায়গায়তেই প্রয়োগ করা হচ্ছে। যাতে করে অনেক সুবিধা অর্জন করা যায়। তার পাশাপাশি সকলে যেন উন্নত সেবা প্রদান করা সহজ হয়। তাহলে চলুন এখন আমরা ন্যানো টেকনোলজি কোথায় কোথায় প্রয়োগ করা হয় সেগুলো জেনে নেই।
  • জ্বালানি উৎপাদনে
  • কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রপাতিতে
  • ইলেকট্রনিক্স এর বিভিন্ন যন্ত্রপাতিতে
  • মহাকাশের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি
  • মহাকাশযানের বিভিন্ন যন্ত্রপাতিতে।
  • ঔষধ ও প্রসাধনি সামগ্রি তৈরিতে
  • কৃত্তিম অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তৈরিতে
  • উন্নতমানের কসমেটিকস এর তৈরীতে
  • ন্যানো রোবটিক্স তৈরী করতে
  • কৃষিক্ষেত্রে
  • বস্ত্র শিল্প কারখানাতে
  • বিভিন্ন শিল্প খাতে
  • মবাইলফোনের হেলথ বৃদ্ধি করতে। ইত্যাদি

ন্যানো টেকনোলজির ইতিহাস

ন্যানো টেকনোলজির ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অনেক অজানা। তাই আমদের সকলের মনে অনেক আগ্রহের সৃষ্টি হয় কিভাবে এই ন্যানো টেকনোলজি আবিষ্কার হলো। আর কে ই বা এই প্রযুক্তির আবির্ভাব করলেন। এই সকল প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আমাদের সকলের এই ন্যানো টেকনোলজির ইতিহাস সম্পর্কে জানা জরুরি।

ন্যানো টেকনোলজির ধারণা সর্বপ্রথম রিচার্ড ফাইনম্যান নামের একজন পদার্থ বিজ্ঞানী ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে এক বক্তব্যে এই প্রযুক্তির ধারণা তুলে ধরেন। এই সভায় তিনি here's Plenty of Room at the Bottom এক শীর্ষক বতব্য প্রদান করেন। সে বক্তব্যে এই প্রযুক্তির কথা তুলে ধরেন।

এই ধারণার জন্য রিচার্ড ফাইনম্যান কে এই আধুনিক প্রযুক্তির জনক বলা হয়। এই ধারণার প্রায় ১৫ বছর পরে বিজ্ঞানী নোরিও তানিগুচি এই টেকনোলজি ব্যাবহার করেন এবং এটি প্রথম সজ্ঞায়িত করেন। তিনি ছিলেন মূলত একজন জাপানি বিজ্ঞানি। তার মতে ন্যানো টেকনোলজি একটি অণু বা পরমাণু দিয়ে তৈরি।

তার তখন তিনি এই ধারণদেন অণু বা পরমাণু দিয়ে তৈরি টেকনোলজি পদার্থের পৃথকীকরণ এবং একত্রিকরণ করার একটি প্রক্রিয়া। এই সকল কিছুর পরেও ভারতের এক টেকনোলজির জনক রসায়নবিদ অধ্যাপক সি.এন. আর. এই সম্পর্কে আরো বিস্তারিত আলোচনা করেন।

ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে আমাদের উপকারে আসে

ন্যানো টেকনোলজি বিভিন্নভাবে আমাদের উপকারে আসে। যে গুলো আমরা বাস্তব জীবনে অনেক ক্ষেত্রে ব্যাবহার উপলক্ষ করে থাকি। তাহলে চলুন এখন আমরা সেই সম্পর্কে জেনে নেই। যেসকল ক্ষেত্রে আমাদের উপকারে আসে সেগুলো হলো

টেকনোলজি ক্ষেত্রেঃ বর্তমানে মাইক্রোচিপ তৈরি করার ক্ষেত্রে এই ন্যানো টেকনোলজি ব্যাবহার করা হয়। আর এর মাধ্যমে অনেক হালকা ডিজিটাল চিপ বানানো সহজ হচ্ছে। আবের এই ছারাও ফ্লেক্সিবল টাচস্ক্রিন তৈরি করার ক্ষেত্রে এই ন্যানো টেকনোলজি ব্যাবহার করা হয়।

বায়ো মেডিসিন প্রয়োগ ক্ষেত্রেঃ এই টেকনোলজি ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতি রোগের কোষ ধ্বংস করার ক্ষেত্রে অনেক ভালো ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন ঔষধের গুণাগুণ বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে এই টেকনোলজি ব্যাবহার করা হয়।

খাদ্যে নিয়ন্ত্রণেঃ এই টেকনোলজি ব্যাবহার করে খাদ্যে থাকা প্যাথোজেন সহজেই খুজে বের করা যায়। যার ফলে আমাদের খাদ্যের গুণাগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়।

শক্তি ক্ষেত্রে প্রয়োগঃ এই টেকনোলজি বর্তমানে বিভিন্ন সোলার প্যানেল তৈরির ক্ষেত্রে খুব ভালোভাবে ব্যাবহার করা হচ্ছে। এই টেকনোলজি ব্যাবহার করার ফলে থার্মাল ইনসুলেশন অনেক গুণে বৃদ্ধি করা যায়।

বস্ত্র ক্ষেত্রেঃ এই টেকনোলজি ব্যাবহার বর্তমানে কাতার অবদান অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। এই টেকনোলজি ব্যবহার করার ফলে আজকাল স্মার্ট ফেব্রিক তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। তার ফলে এই বস্ত্র সহজেই নষ্ট হয়ে যায় না এবং অনেকদিন পর্যন্ত টেকসই হয়।

ন্যানো টেকনোলজি সুবিধা ও অসুবিধা

ন্যানো টেকনোলজির অনেক সুবিধা এবং কিছু অসুবিধা রয়েছে। এখন আমরা সেই সম্পর্কে জানবো। তাহলে চলুন এখন আমরা এর সুবিধা জানবো তারপরে এর অসুবিধা। ন্যানো টেকনোলজি সুবিধা গুলো হলোঃ
  • এই টেকনোলজি প্রয়োগ করে উৎপাদন করা হচ্ছে স্মার্ট ড্রাগ। আর এই ঔষধ ব্যাবহার করে খুব দ্রুত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • টেকসই এবং বিভিন্ন রকমের অনেক ভালো পণ্য উৎপাদন করা যায়।
  • এই টেকনোলজি ইলেকট্রনিক শিল্পে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
  • রোবট তৈরি করা অনেক সহজ হচ্ছে।
  • খাদ্য দ্রব্য সিলভার তৈরীর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এই টেকনোলজি।
  • এই টেকনোলজি ব্যাবহার করে বিভিন্ন গুণগত মানের সৌরশক্তি উৎপাদন করা হচ্ছে। যা পূর্বের তুলনায় অনেক পাওযারফুল।
এতোসকল সুবিধার পরেও এর কিছু অসুবিধা পরিলক্ষিত করা যায়। যেগুলো নিম্নে আলচনা করা হলো
  • এই প্রযুক্তি অনেক ব্যায়বহুল
  • ন্যানো টেকনোলজি ব্যাবহার করে যে কফি তৈরি করা হচ্ছে যা যেকোন কফির তুলনায় অনেক বেশি দাম। যার জন্য কফি ব্যাবহার করে কোন নতুন কিছু তৈরি করতে অনেক ব্যায়বহুল হয়ে যাবে।
  • এই টেকনোলজি ব্যাবহার করে সবথেকে প্রাণঘাতি পারমাণবিক বোমা তৈরি করে আগের তুলনায় অরো অনেক ক্ষতিকারণ করে তৈরি করা হচ্ছে।
  • মেডিসিন যে ব্যাবহার করা হয় এই ন্যানোপার্টিকেল মানুষের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর।

লেখকে মন্তব্য

আজকে আমাদের এই ওয়াবসাইটের মূল আলোচনার বিষয় ছিলো ন্যানো টেকনোলজি কি সেই সম্পর্কে। আশ করছি আপনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পরে উক্ত বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন। এই রকম তথ্য বহুল আর্টিকেল প্রতিদিন ফ্রীতে পড়ার জন্য আমদের ওয়াবসাইট নিয়োমিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  •      মোঃ শফিকুল ইসলাম ✅
    মোঃ শফিকুল ইসলাম ✅ 22 March 2024 at 23:14

    https://www.techmybd.com/2024/02/bichi-kolar%20upokarita.html

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url