কম্পিউটার ভাইরাস কি - কম্পিউটার ভাইরাস কিভাবে কাজ করে

আমরা সকলে কম্পিউটার ভাইরাসের নাম শুনেছি। তবে কম্পিউটার ভাইরাস এর কাজ সম্পর্কে তেমন জ্ঞান নেই। আজকের আলোচনায় আমরা কম্পিউটার ভাইরাস কিভাবে কাজ করে এবং এর সম্পর্কিত সকল কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করব। আপনি যদি কম্পিউটার ভাইরাস কিভাবে তারকাজ করে এ সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
কম্পিউটার ভাইরাস কি
বর্তমানে আধুনিক যুগে কম্পিউটার ভাইরাসের বিস্তার অনেক বেড়ে গেছে। আর এজন্য আমরা নিয়ে এসেছি ভাইরাস কিভাবে কাজ করে, কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। জানতে হলে আমাদের সঙ্গে থাকুন।

ভূমিকা

বর্তমানে কম্পিউটার ভাইরাসের পরিমাণ অনেক গুন বেড়ে গেছে। এর ফলে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্ত এবং মানুষজন ক্ষতির দিকে সম্মুখীন হচ্ছেন। এই কম্পিউটার ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য আমাদেরকে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যাতে আমরা এসব ভাইরাস থেকে নিজেদের কম্পিউটার এবং গোপনীয় তথ্য সুরক্ষা রাখতে পারি। আর এজন্য আমরা আজকে কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জানবো।

কম্পিউটার ভাইরাস কি

একটি কম্পিউটার ভাইরাস হল এক ধরণের ক্ষতিকারক সফ্টওয়্যার (ম্যালওয়্যার) যা নিজেকে কপি করতে পারে এবং নিজের প্রতিরূপ সৃষ্টি করতে পারে এবং অন্য কম্পিউটার বা সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি সাধারণত কম্পিউটার ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়া কম্পিউটারে প্রবেশ করে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কম্পিউটারের সকল ফাইলপত্র নষ্ট করে দিতে পারে। এটি সিস্টেমকে আক্রমণ করে এবং নিজের কন্ট্রোলে রাখে। ফলে কম্পিউটার হ্যাং সহ বিভিন্ন ধরনের ফাইল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

এমনকি কিছু শোনা গেছে এই ভাইরাসের কারণে নাকি কম্পিউটারের মনিটর পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাহলে বুঝতে পারছেন কম্পিউটার ভাইরাস কতটা ক্ষতিকর এবং কতটা শক্তিশালী। এ পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষতিকর ভাইরাসের লিস্টে রয়েছে স্টোম টোজাম ,মেলিসা, মাই ডুম, স্যাসার, অ্যানা কুর্নিকোভা, মরিস অ্যান্ড কনসেপ্ট, আই লাভ ইউ, স্ল্যামার, নিমডা ও কনফিকার সহ আরো অনেক রয়েছে। যা অনেক শক্তিশালী ও ক্ষতিকর ভাইরাস।

কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার

কম্পিউটার ভাইরাস প্রধানত দুই প্রকার। যেমনঃ নির্বাসি ভাইরাস(resident virus), অনির্বাসি ভাইরাস(non resdent virus)

নিবাসী ভাইরাস ভাইরাস হল এক ধরনের ম্যালওয়্যার যা একবার সক্রিয় হয়ে গেলে একটি স্থায়ী অবস্থান দখল করে এবং প্রতিবার এটি চালু করার সময় একটি ভিন্ন প্রোগ্রামকে সংক্রমিত করে।

অনিবাসী ভাইরাস এক ধরনের ম্যালওয়্যার যা একবার সক্রিয় হয়ে গেলে শিখে যায় যে এটি অন্য কোন প্রোগ্রামগুলিকে সংক্রমিত করতে পারে, মূল প্রোগ্রামে নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয় এবং তারপরে নিজেকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়।

কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ

আমরা এখন কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণসমূহ নিয়ে আলোচনা করব। চলুন জেনে নেওয়া যাক কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ সমূহ।
  • আপনার কম্পিউটার যদি ভাইরাস আক্রান্ত হয় তাহলে আপনাকে একটি নোটিফিকেশনে মাধ্যমে তা কম্পিউটারে জানিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে আপনারা জানতে পারবেন কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে কিনা।
  • কম্পিউটারে কোন প্রোগ্রামে ক্লিক করলে হ্যাং হওয়া বা প্রোগ্রামটি ওপেন না হওয়া। কম্পিউটারে ইন্টারনেটের গতি স্লো হয়ে যাওয়া। এ বিষয়গুলো দেখা দিলে আপনি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার দিয়ে নিশ্চিত হবেন যে আপনার কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে।
  • অনেক সময় দেখবেন আপনার কম্পিউটার অটোমেটিক বন্ধ এবং অন হয়ে যাচ্ছে এটিও একটি ভাইরাসের লক্ষণ।
  • কম্পিউটার ওপেন করার পর কোন আইকনে ক্লিক করলে রেসপন্ড না করলে বুঝবেন ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে।
  • ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার মূল লক্ষণ হলো কম্পিউটার ধীরগতি সম্পন্ন হয়ে যাওয়া।
  • এছাড়া অনেক সময় দেখবেন কম্পিউটারের কোন ফাইল ওপেন করার সময় বিপজ্জনক অনেক ধরনের মেসেজ বা নোটিফিকেশন দেখাবে যা ভাইরাস করে থাকে।
  • কোন ধরনের ফাইল ওপেন করতে যদিও অক্ষম হন তাহলে বুঝবেন আপনার কম্পিউটার শক্তিশালী ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।
  • কম্পিউটার ভাইরাসের কারণে দেখবেন আপনার কম্পিউটার ঠিকমতো কাজ করবে না অ্যাপ্লিকেশন গুলো ভাল মত রান করতে পারেনা।
  • অবশ্যই বলব ভাইরাস সনাক্ত করার জন্য এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন।

কম্পিউটার ভাইরাস কিভাবে কাজ করে

আপনারা এখন কম্পিউটার ভাইরাস কিভাবে কাজ করে এ সম্পর্কে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। কম্পিউটার ভাইরাস হলো ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা ম্যালওয়্যার যা কিনা নিজে নিজে প্রতিরূপ সৃষ্টি করতে পারে এবং অন্যের অনুমতি ছাড়া কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারে। প্রবেশ করে কম্পিউটারে সকল কিছু ধ্বংস করে দেয়।ভাইরাসগুলি বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যেমন ইমেল সংযুক্তি, সংক্রামিত ইউএসবি ড্রাইভ, নেটওয়ার্ক সংযোগ, বা সফ্টওয়্যার বা অপারেটিং সিস্টেমের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে প্রবেশ করতে পারে।

সংক্রমিত কম্পিউটারের কোন ডিভাইস যদি অন্য কম্পিউটারে প্রবেশ করানো হয় তাহলে সেই কম্পিউটারটিতে ওই ভাইরাস করতে পারে। এই ভাইরাস গুলো নিজের প্রতিরূপ সৃষ্টি করতে পারে এবং বিভিন্ন ফাইলে ছড়িয়ে যেতে পারে। আপনি যখনই কোন না কোন ফাইল ওপেন করবেন তখনই সাথে সাথে ওই ফাইলের মধ্যে ভাইরাস গুলো সংক্রমিত হবে।

 অর্থাৎ যে ফাইল ওপেন করবেন সেই ফাইলে কম্পিউটার ভাইরাস সংক্রমণ ঘটবে। এভাবে কম্পিউটার ভাইরাস কাজ করে। অনেকগুলো ভাইরাস আছে যা আপনার কম্পিউটার সকল ফাইলপত্র একেবারে নষ্ট করে দিতে পারে। এবং আপনার কম্পিউটারের অনেক ক্ষতি করতে পারে।

কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়

এখন পর্যন্ত আমরা কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে জানলাম। এখন আমরা কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
  • আপনার অপারেটিং সিস্টেম, সফ্টওয়্যার এবং অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম আপডেট রাখুন।
  • কম্পিউটারে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ডাউনলোড করে রাখুন। তবে পেইড এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ভালো কাজ করে।
  • বিশেষ করে অজানা বা সন্দেহজনক উৎস থেকে ইমেল সংযুক্তিগুলি খোলার সময় সতর্ক থাকুন৷
  • ইনকামিং এবং আউটগোয়িং নেটওয়ার্ক ট্রাফিক নিরীক্ষণ করতে একটি ফায়ারওয়াল ব্যবহার করুন।
  • অবিশ্বস্ত ওয়েবসাইট থেকে কোন কিছু ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকুন।
  • যেকোন পেনড্রাইভ ব্যবহার করা পূর্বে তা এন্টিভাইরাস স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করে প্রবেশ করাবেন।
  • পাইরেটেড ওয়েবসাইট থেকে গান মুভি গেম ইত্যাদি ডাউনলোড থেকে বিরত থাকবেন।
  • যেকোনো প্রকার লিংক থেকে কোন কিছু ডাউনলোড করবেন না।
বর্তমানে ইন্টারনেটে অনেক ভালো ভালো এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার পাওয়া যায় যা অনেকটা ফ্রি ব্যবহার করতে দেয়। তাই আপনারা এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার গুলি ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত ভাইরাস পরীক্ষা করতে পারবেন যা আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস আছে কিনা। আর অপ্রয়োজনীয় ইন্টারনেটে লিংক ওপেন করা থেকে বিরত থাকবেন। আরেকটা কথা মনে রাখবেন এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার কখনো পুরোপুরি ভাবে আপনার কম্পিউটারকে সুরক্ষা দিতে পারবে না। সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন আপনার সচেতনতা ও দায়িত্বশীল মনোভাব।

আমাদের শেষ কথা

আশা করি আপনারা কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে সকল কিছু বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। সকলের এটি জানা উচিত। কারণ এই ভাইরাস আমাদের প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কম্পিউটার থেকে মুছে দিতে পারে আবার অনেক সময় আপনার তথ্যগুলো হ্যাক করে নিতে পারে যা আপনার অনেক ক্ষতি হতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অনুযায়ী কম্পিউটার ব্যবহার করবেন এবং সচেতন ভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url